ইঞ্জিন অয়েল কি? ইঞ্জিন অয়েল হলো এক প্রকার খনিজ তেল যা মোটরসাইকেলে ব্যাবহার করা থাকি। অনেকের কাছে এটি মবিল নামে পরিচিত। ইঞ্জিন অয়েল মোটরসাইকেলের একটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। ইঞ্জিন অয়েলের কাজ মোটরসাইকেল ইঞ্জিনকে পিচ্ছিল রাখা যাতে ইঞ্জিনের ভিতরের পার্টস সহজে মুভমেন্ট করতে পারে । এছাড়া ইঞ্জিন ঠান্ডা রাখতে ইঞ্জিন অয়েল সাহায্য করে। ইঞ্জিন অয়েলকে মূলত মোটর ওয়েল, ইঞ্জিন লুব্রিকেন্টবা ইঞ্জিন অয়েল নামে পরিচিত।
অয়েল গ্রেড এবং টাইপ: ইঞ্জিন অয়েল বা মোটর অয়েল যেটাই বলি না কেন এর গ্রেড নম্বর এবং সঠিক ব্যবহার নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। অনেকেই অতি উৎসাহী এই ব্যাপারটায়। সবাই জানতে চায় তার মোটর সাইকেল, বাইক কিংবা গাড়ির জন্য কোন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ভালো হবে। আজ আমরা আলোচনা করবো এই ইঞ্জিন অয়েলের গ্রেড এবং সঠিক ব্যবহার নিয়ে।
ইঞ্জিন অয়েল এর কিছু স্ট্যান্ডার্ড রয়েছে যেমন SAE,JASO,API এলাকাগুলো আপনি একটি ইঞ্জিন অয়েলের দেখতে পারবেন যেমন ধরেন SAE- Society of automatives engineers, API- আরো রয়েছে এপিআই মিনিং হচ্ছে আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইন্সটিটিউট এবং JASO মিনিং হচ্ছে জাপানিজ অটোমেটিক স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অরগানাইজ্যাশন। সরকার আমাদের বাংলাদেশে জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড করে দিয়েছে আর আমরা সেটা দেখতে পাই MA/MA2 এই দুটি লেখা যেকোন বতোলে দেখতে পেলে ভাববেন এটা মটরসাইকেলের ইঞ্জিন ওয়েল।
এখন আসা যাক ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড নিয়ে বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের জন্য অনেক প্রকারের ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড পাওয়া যেমন 10w/30, 10w40 and 20w40,20w50 পাওয়া যায় ।যেমন ধরেন 10w40- 10 Lower Temperature Viscosity 40- Higher Temperature viscosity W=Winter। এই W মানে winter কে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু অনেকের একটা ভুল ধারণা w এর মানে (weight). কিন্তু এই w দিয়ে winter ই বোঝানো হয়। এই W এর স্কেল 0 হতে 20 পর্যন্ত হয়ে থাকে। এখানে নাম্বার যত কম হবে সেই ইঞ্জিন অয়েল তীব্র ঠান্ডার মাঝেও সহজে ঘন হয়ে জমবে না বরং পাতলা তরল ফর্মেশনে থাকবে এবং ইঞ্জিন স্টার্টাপের সময় খুব দ্রুত সার্কুলেশন হবে যেটা ইঞ্জিনের জন্য জরুরী। এই ইঞ্জিন ওয়েল এর কিছু টাইপ রয়েছে যেমন S Type C Type MA Type.আরে প্রথমে আসি S Type ইঞ্জিনে পেট্রোল অকটেন জাতীয় জ্বালানি ব্যবহার করা হয় ।C Type ইঞ্জিনগুলো ডিজেল চালিত ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার হয় মোটরসাইকেলের জন্য MA Type ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়।
আমরা অনেকেই ইঞ্জিন অয়েল টাইপ নিয়ে কনফিউজ থাকি যে কোন টাইপের ইঞ্জিন অয়েল ইউজ করা আমার মোটরসাইকেলের জন্য ভালো হবে আর আজকে আমরা এসেছি ইঞ্জিন অয়েল টাইপ নিয়ে কথা বলতে।
ইঞ্জিন অয়েল তিন ধরনের হয় মিনারেল, সেমি-সিনথেটিক এবং ফুল সিনথেটিক । মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয় তারপরও এটিকে প্রসেস করে এবং পিউরিফাই করে আমাদের ইঞ্জিন এর জন্য প্রস্তুত করা হয়। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে সাধারণত ৯০% পারসেন্ট বাইকে সব সময় মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা হয়। মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল সাধারণত ব্যবহার করা হয় সময় একটি মোটরসাইকেল নতুন অবস্থায় অথবা ব্রেক ইন পিরিয়ড এ প্রথমদিকে 2 হাজারের কিলোমিটার। সাধারণত মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল সিনথেটিক বা সেমি সিনথেটিক থেকে দাম অনেক কম হয় এবং বাংলাদেশের সব জায়গায় এভেলেবেল। মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে সর্বোচ্চ ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো উচিত।
সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল এবং মিনারেল মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলের মিশ্রণে তৈরি হয় সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল । যেটার পরিমান সিন্থেটিক ৩০% এবং মিনারেল ৭০% পার্সেন্ট। সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল টি মিনারেল এর পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।মিনারেল এর তুলনায় সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলের দাম একটু বেশি তবে এতে পারফরম্যান্স মিনারেল থেকে ভালো পাওয়া যায়। যেমন মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলে আপনি যতটুকু রান করতে পারবেন সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল এ আরো একটু বেশি রান করতে পারবেন। যেমন আপনি স্বাভাবিকভাবে একটি সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে ১৫০০ থাকা ১৭০০ কিলো চালাতে পারবেন।
ব্রেক ইন পিরিয়ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
সিনথেটিক অয়েল বা ফুল সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল সর্বোচ্চ পরিশোধিত এবং এর সাথে মিশ্রণ করা হয় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল দ্বারা তৈরি করা হয় । সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলের দাম সাধারণ ইঞ্জিন অয়েলের থেকে অনেকটা বেশি তবে এর উপকারিতা রয়েছে অনেক। সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনকে সর্বোচ্চ পরিমাণে সুরক্ষা দেয় পারফরম্যান্স ভালো পাওয়া যায় এবং ইঞ্জিন কে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে। সাধারণত একটি নতুন বাইক 3/4 হাজার কিলো রান হওয়ার পর একটি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ইউজ করা যায়। একটি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে ৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো উচিত।
ব্যবহারের সঠিক নিয়ম: মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন অয়েল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এজন্য ইঞ্জিন অয়েলের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জানার অতি জরুরী। অনেকেই আমরা ইঞ্জিন অয়েলের ব্যবহার সম্পর্কে জানিনা। অনেক সময় দেখা যায় আমরা ইঞ্জিন অয়েল এর গ্রেড সম্পর্কে কোন ধারণা না নিয়েই দোকান থেকে যে কোন একটি ইঞ্জিন অয়েল কিনে আমাদের বাইকে ব্যবহার করি সেই ক্ষেত্রে আমাদের মোটরসাইকেলের হতে পারে অনেক বড় ধরনের সমস্যা। ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম খেয়াল রাখতে হবে আপনার মোটরসাইকেলের জন্য নির্দিষ্ট যে গ্রেড আছে সেই গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হবে। নতুন মোটরসাইকেল এর ক্ষেত্রে ব্রেক ইন পিরিয়ড বা তিন হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হবে। ব্রেক ইন পিরিয়ড পার হওয়ার পর সেমি-সিনথেটিক অথবা সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা ভালো। মিনারেল এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০০ কিলোমিটার ব্যবহার করুন। সেমি-সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল সর্বোচ্চ ১৫০০ কিলোমিটার ব্যবহার করুন এবং সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল এর ক্ষেত্রে ২৫০০ থাকে ৩ হাজার কিলোমিটার ব্যবহার করতে পারেন।মোটরসাইকেল বিষয়ক যে কোন টিপস,নিউজ,আপডেট পেতে বেঙ্গল বাইকার এর সাথে থাকুন।
বাংলাদেশের সকল মোটরসাইকেলের দাম জানতে এখানে ক্লিক করুন